ফিলিংসকে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন আপনি ও জেম্স ― এ-কথা কতটুকু সত্য?
সম্পূর্ণ সত্য। আমি আর জেমস্ মিউজিকজগতের বাইরে দু’জন খুব ভালো বন্ধু। এটার বয়স ব্যান্ডের বয়সের চেয়ে অনেক বেশি।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ব্যান্ড ছেড়ে দেবার কারণ কি?
এটা ভুল কথা। আমি ব্যান্ড ছাড়িনি। আর ফিলিংস ভাঙেনি, কখনো ভাঙবেও না, হয়তো সাময়িকভাবে আমরা বিচ্ছিন্ন।
বর্তমানে অন্য কোনো ব্যান্ডে বাজাবার ইচ্ছে আছে?
প্রশ্নই আসে না। ফিলিংস আমার রক্তে মিশে আছে। এখন যদি মেটালিকা বা বিটলস্ও অফার দেয় তাদের সঙ্গে বাজাবার জন্য আমি তা-ও প্রত্যাখ্যান করব।
শ্রোতারা অবশ্যই আপনার মতো ড্রামারকে কোনো ব্যান্ডে বাজাতে না দেখে খুব মিস করবে …
এটা সাময়িক। আমি আবার ফিলিংসে বাজাবো। আমি আবারো বলছি ফিলিংস ভাঙেনি আর আমিও ব্যান্ড ছাড়িনি।
আপনার অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে ফিল্মে ব্যস্ততার কথা বলা হয়েছে। এটা কতটুকু সত্য?
এটা সম্পর্ণ মিথ্যা। ফিল্মে আমি অনেকদিন ধরেই বাজাই। হঠাৎ এমন কী ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে ব্যান্ডকে সময় দিতে পারব না!
অন্য কোনো ব্যান্ড থেকে অফার আসছে?
হরহামেশাই আসছে। তাদেরকেও ওই একই উত্তর দিচ্ছি।
আপনার মতো দক্ষ ড্রামারকে হারিয়ে ফিলিংস বা নগরবাউল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এজন্য নিজেকে কতটুকু দায়ী করেন?
এ ক্ষতিটা সাময়িক। আর নগরবাউল নামে যে-কথাটি বললেন, ওটা কোনো ব্যান্ড নয়। জেমসের সলো অ্যালবামের কাজে ওই গ্রুপ কাজ করছে। আমি আবারও বলছি আমাদের ভালোবাসার বন্ধন এতটা হাল্কা নয় যে সামান্য কারণেই ভেঙে যাবে। আমি আবারো আমার বন্ধু জেমস, আসাদ, বাবুদের সাথে বাজাবো, পারফর্ম করব। ফিলিংস আবার জোড়া লাগবে।
তবে কি এ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে কোনো তৃতীয় পক্ষের হাত আছে?
মোটেই না।
শোনা গেছে ব্যান্ডের সমস্ত টাকাপয়সা লেনদেনের ব্যাপারে আপনিই ব্যবস্থা করতেন এবং এটা নিয়েই ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত।
এ-কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই ১৪ বছরে ব্যান্ডের টাকাপয়সার ব্যাপারে আমাদের কোনোরকম কথাকাটাকাটি হয়নি। তারা আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেছে আর আমিও তাদের বিশ্বাস রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি। আরো একটি আশ্চর্য় বিষয় আমরা টাকাপয়সা লেনদেনে কোনো কন্ট্রাক্টপেপারও ব্যবহার করিনি। আমাদের মুখে-মুখেই সব কাজ হয়েছে।
তবে এ অবস্থা সৃষ্টির মূল রহস্যটা কি?
আসলে আমি পারিবারিক সমস্যা এবং ব্যবসার কারণে বেশ কিছুদিন ব্যান্ডমেম্বারদের সাথে যোগাযোগ রাখতে ব্যর্থ হই। এর কিছুদিন পর যখন তাদের সাথে দেখা হয় তখন আমাকে তারা বলে আমার অনুপস্থিতিতে সোলস-এর জুয়েলকে দিয়ে বাজানো হচ্ছে। কথাটি শুনে আমি খুব আপসেট হয়ে পড়ি। এর কিছুদিন পর সবাই আলাপচারিতার মাধ্যমে … জেমস, বাবু, আসাদ … আমাদের ফিলিংসের কাজ স্থগিত রাখার কথা বলে। এ-ব্যাপারে আমোদের কোনো কথাকাটাকাটিও হয়নি। আসলে এটা ছিল আমাদের সাময়িক অভিমান,যা সবার জীবনেই আসে;কিন্তু এ অভিমানটাকে মিডিয়া বিরাট দ্বন্দ্বের মতো উপস্থাপন করায় জটিলতা আরো বেড়েছে।
এখন আপনার অনুভূতি?
আমি বর্তমানের এ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি মনেপ্রাণে চাই আবার ফিলিংস এক হোক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটা সম্ভব। আমাদের এ সম্ভাবনা ৮০%। আমরা আবার জড়ো হব। এটা সাময়িক মান-অভিমানপর্ব মাত্র।
সাক্ষাৎকারগ্রহীতা : তানভীর তারেক
[ফিলিংস সম্পর্কে ভূমিকার বা পাদটীকার কোনো জরুরৎ নিশ্চয় নাই। ফিলিংস স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নতুনধারা গানবাজনায় একটা ঘটনা। ব্যান্ডমিউজিকের চারদশকদীর্ঘ পথপরিক্রমায় ভাঙাগড়া আর উত্থান-পতনের বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা বাংলাদেশের মিউজিকের লিখিত নথিতে নেই। এই কথাচারিতায় একটি বিরলপ্রায় নথির দেখা আমরা পাই যেখানে জেমসের সংগীতজীবনের দীর্ঘকালীন সহচর ফান্টির জবানিতে একটি বিশেষ সময়ের ক্রান্তিদৃশ্যের কিছু ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ফিলিংস যদি হয় জেমসের জীবনের ভিত্তিদুয়ার এবং বিকাশপাটাতন, তাহলে ফান্টি ফিলিংসের তথা জেমস্ নামের ঘটনাটার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত প্রভাবক এক। ফান্টির ড্রামিং নব্বইয়ের দশকে বাংলা গানের ক্ষেত্রে ব্যাপক উল্লাস ও জজবার জন্ম দিয়েছিল। সম্ভবত কোনো-একটা বাদ্যযন্ত্র তথা ড্রামস্ বাজিয়ে ব্যাপক শ্রোতাগোষ্ঠীর প্রিয়ভাজন হওয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশ উল্লেখের দাবি রাখে। এই ইন্টার্ভিয়্যু আমরা সংগ্রহে রাখছি ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের পাক্ষিক আনন্দভুবন ১৬ জুলাই সংখ্যা থেকে, এটি নিয়েছেন তানভীর তারেক, সেই পত্রিকায় ‘কাঠগড়া’ শীর্ষক একটি নিয়মিত বিভাগে এই প্রকারের বেশকিছু মূল্যবান পাঠবস্তু আমরা পাবো, ভবিষ্যতে বিভিন্ন সুযোগে এক-দুইটা আমরা গানপারে নথিবদ্ধ করে রাখব বলে বাসনা আছে। ― গানপার]
- পুরস্কারপাওয়া ভারতীয়া বাংলা উপন্যাস - October 22, 2025
- শিশুসাহিত্যচর্চায় রায় ফ্যামিলি - October 22, 2025
- একটি ইতিহাসের অটোবায়োগ্রাফি - October 21, 2025
COMMENTS